মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ।
বনানী বাইশ তলার একটা বিল্ডিং এর অষ্টম তলায় আগুন লাগলো। অষ্টম তলা অবধি উঠে আগুন নেভানোর ক্ষমতা আমাদের ফায়ার সার্ভিসের ছিলো না।
সেদিন ফায়ার সার্ভিস কর্মীর একজন কান্না করতে করতে চিৎকার করছিলো,' মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি দিন, এভাবে আগুন নেভানো সম্ভব না'
তখনই আমাদের ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বুঝে গিয়েছিলো কতটুকু 'সক্ষমতা' আসলে তাদের দেওয়া হয়েছে। আগুন নেভানো ঠিকঠাক সময়ে সম্ভবও হয় নি। ২৬ জন মারা গেলো। আহত ৭৫ এর কাছাকাছি!
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতেই ঘটেছিলো আরও বড় ট্র্যাজেড়ি। চকবাজার। ৭৮ জন মারা গেলো। আহত ৫২!
২০১০ সালে গুলশানে ১১! ঢাকার নিমতলীতে সেই কাছাকাছি সময়ে ১০০ জনের শরীর পুড়ে কয়লা হয়ে গেলো।
চট্টগ্রামে সীতাকুন্ডে এখন পর্যন্ত মৃতদেহের সংখ্যা ৪৯ জন! কোথায় গিয়ে থামে কে জানে। এদের ভেতর ৭ জন ফায়ারসার্ভিস কর্মী।
যাদের ঢাল নেই, তলোয়ার নেই- প্রাণ দিয়েই আগুন নেভানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোনো উচ্চতর প্রশিক্ষণ
নেই । নেই কোনো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
একজনের হাতের কব্জি পড়ে আছে রাস্তায়। আরেকজনের পা নেই। একজনের শরীর পুড়ে গেছে,বাসায় কল দিয়ে কাতরাতে কাতরাতে বললো, ' মামা আমার শরীর পুড়ে গেছে। আমি হয়তো আর ফিরবো না। আমার কলিজা মেয়ের মুখটা আর দেখা হবে না। মামা তুমি ওকে দেখে রাখিও। 'সে আর ঘরে ফিরে নি।
ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ কিংবা জ্ঞান তাদের দেওয়া হয় নি কোনোটাই । এমনকি ফায়ারসার্ভিস কর্মীদের মুখপাত্র স্বয়ং আত্মসমর্পণ করলো সাংবাদিকদের সামনে,
' এই আগুন কিভাবে নেভাতে হবে আমার জানা নেই।'
সেনাবাহিনীর মতো সম্মান নেই তাদের, নেই পুলিশের মতো প্রভাব। নেই পাওয়ার প্র্যাকটিসের জায়গা, তবু কর্মক্ষেত্রে নিজেদের উজাড় করে দেন তারা, রাখেন জীবন বাজি। মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করার এমন নজির রোজ রোজ আর কেউ দেখাতে পারেন না। পারেন কেবল একটি বাহিনীর কর্মীরা। তারা আমাদের বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস।
অনেক সময় পার হয়ে গেছে। আর দেরি না করে ফায়ার সার্ভিস কে আরো আধুনিকায়ন করা হোক। নইলে দুর্ঘটনা ঘটে আরো মানুষের প্রান যেতেই থাকবে।
কোন মন্তব্য নেই