গুজব সৃষ্টিকারিরাই দেউলিয়া হবেন !!!
গুজব সৃষ্টিকারিরাই দেউলিয়া হবেন !!!
————————————————
রসিকতা করে আমরা সকলেই বলি ‘হুজুগে বাঙালি’। রসিকতা করে বলা হলেও কথাটি যে মিথ্যা নয়, তা নানাভাবেই বারবার প্রমাণিত।
বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ও সন্দেহ প্রবনতা মারাত্মকভাবে বেশী। মুখরোচক গল্প,যাচাই-বাছাই ছাড়াই ধারণাপ্রসূত কথা শোনা ও অপপ্রচার করার আগ্রহও অনেক বেশি।এই অতি আগ্রহের কারণে বাংলাদেশে গুজব ছড়ানো অনেক সহজ।
বিভিন্ন মহল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়। বাংলাদেশে ছড়ানো এধরনের গুজবের সংখ্যা নেহায়েতই কম নয়। গুজবের ফলে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা অতিতে সংঘঠিত হয়েছে এবং এখনো প্রতিনিয়ত হচ্ছে।
আজকাল গুজব ছড়ানোর মাধ্যমেরও পরিবর্তন হয়েছে। আগে মানুষ মুথে মুখে গুজব ছড়াতো।
এখন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়। গুজব ছড়ানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বিশেষ করে ফেসবুক গুজব ছড়ানোর অন্যতম প্ল্যাল্টফরম হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের অতিতের বড় বড় গুজব যেমনঃ-
পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথাঃ
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য মানুষের মাথা লাগবে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল।
ছেলেধরা গুজবঃ
পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা লাগবে এই গুজব ছড়িয়ে পড়লে আরেকটি গুজব ছড়ায়, তা হলো সেতুতে শিশুদের মাথা লাগবে।এই ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে শুরু হয় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি।
ধর্ম অবমাননার গুজবঃ
২০১২ সালে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়। বাংলাদেশের আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে এবং এখনো ঘটছে।
চাঁদে সাঈদীঃ এক অনন্য হাস্যকর ও মিথ্যা গুজব।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চেহারা চাঁদে দেখা গেছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে মসজিদ থেকে একযোগে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির কর্মীরা দেশেজুড়ে তাণ্ডব চালায়, গুলি ছুড়তে বাধ্য হয় পুলিশ এবং তান্ডবের ফলে বেশ কিছু মানুষ মারা যায়।
অতি সম্প্রতি দেশের সংবাদপত্রসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখা যাচ্ছে পেনিক সৃষ্টির মহড়া।
বাংলাদেশ শ্রীলংকার মত দেউলিয়া হওয়ার গুজব।
বাংলাদেশে জ্বালানী সংকটের গুজব।
বৈদেশিক রিজার্ভ শুন্য হওয়ার গুজব।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকটের গুজব।
আইএমএফ এর নিকট দেউলিয়া হতে রক্ষার ঋনের আবেদনের গুজব।
যে সব কারণে শ্রীলঙ্কার আজকের এ অবস্থা।
ব্যাপক কর হ্রাসে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যায়, ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপুল পরিমাণ নতুন টাকা ছাপায় এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
ডলারের মূল্য বেঁধে রাখার কারণে অভিবাসী শ্রমিকেরা রেমিট্যান্স পাঠাতে থাকেন হুন্ডির মাধ্যমে।
পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া হঠাৎ অর্গানিক চাষাবাদের শুরু এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার বন্ধের ফলে একদিকে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক হ্রাস পেয়ে এক তৃতীয়াংশে নেমে আসে।ফলে খাদ্য সংকট দেখা দেয়।
শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য চায়ের উৎপাদন ও রপ্তানি কমে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপজ্জনক পর্যায়ে নেমে আসে।
পর্যটন শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। ২০১৯ সালের ইস্টার বোমা হামলা পর্যটক আগমন কমিয়ে দেয়। ২০২০ থেকে শুরু হওয়া কোভিড মহামারির কারণে খাতটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি শ্রীলংকার ভেগান্তিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
আমাদের দেশের অর্থনীতি শ্রীলংকার মত নয়, তাই গুজব সৃষ্টিকারিরা নিজেরাই দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পথে।
জ্বালানী,বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বিদ্যুৎ সংকট নেই তবে সরকার এসবের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন। সাশ্রয়ী হওয়া আর সংকট এক নয়।
গুজব সৃষ্টিকারিরা এখানেও দেউলিয়া হতে বাধ্য, কারন জীবন-সংসারের প্রয়োজনে তাঁরাও নিজেরাও সাশ্রয়ী হন।
আর যারা বিদুৎ ও জ্বালানী খাতের সংকট ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্দোলন করছেন তাদের নিয়ে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।
শুধু মনে আছে যারা বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি না করে হাজার হাজার কোটি টাকার খাম্বা বানিয়েছিলেন এবং দেশে গড়ে ১২/১৪ ঘন্টা লোড শেডিং ছিল তারাও অব্যবস্হাপনার কথা বলে !
আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়া নতুন কিছু নয় তবে দেউলিয়াত্ব ঠেকানোর ঋণ সরকার চায় নাই।
অনেকের লেখা পড়লে মনে হয় যেন দেশ শ্রীলংকা হলেই তারা খুশী।
তাদের খুশীটা ইতঃমধ্যেই দেউলিয়া হয়েছে।
অনেকেই কষ্টে আছেন,
কেন দেশ এখনো শ্রীলংকা হল না বা কেন এখনো জ্বালানি সংকট হলো না বা কেন বিদ্যুৎ বন্ধ হচ্ছে না !
তাদের মনকষ্ট দুর হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই এবং
তাদের চাওয়াটাও দেউলিয়া হবে।
তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন কিছু লেখা বা শেয়ার করার পুর্বে সে বিষয়ে কিছু জানার এবং বোঝার চেষ্টা করাই ভাল।
না হলে আপনার লেখা বা শেয়ারও দেউলিয়া হবে।
আল্লাহর রহমতে যতদিন শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশ
ততদিন দেউলিয়া হবে না দেশ।
লেখক: সিরাজুল ইসলাম সিরাজ
No comments